পাক-ভারত উপমহাদেশের এটি একটি জনপ্রিয় প্রাচীন খেলা। এই উপমহাদেশে অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন নামে খেলাটি অনুষ্ঠিত হতো। যেহেতু আঞ্চলিক খেলা তাই বিধিবদ্ধ নিয়মকানুন ছিল না । গ্রামাঞ্চলে এই হা-ডু-ডু খেলাই ছিল বিনোদনের একমাত্র উৎস। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী হা-ডু-ডু খেলার পোশাকি নাম কাবাডি। স্বাধীনতা লাভের পর বাংলাদেশের খেলাধূলায় গতি সঞ্চারের লক্ষ্যে বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশন পুনর্গঠন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশন গঠিত হয় । বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের প্রচেষ্টায় ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২য় সাফ গেমসে কাবাডি অন্তর্ভুক্ত হয়। তখন থেকেই কাবাডি খেলা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পা রাখে। ১৯৯০ সালে বেইজিং-এ অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে কাবাডি খেলা অন্তর্ভুক্ত হয়ে নিয়মিত ইভেন্ট হিসেবে স্থান করে নিয়েছে ।
কাবাডি মাঠ : মাঠ হবে সমান্তরাল এবং নরম। মাটি অথবা ম্যাট দ্বারা তৈরি হবে। কাবাডি খেলায় তিন ধরনের মাঠ রয়েছে-
১. পুরুষ ও জুনিয়র বালক।
২. মহিলা ও জুনিয়র বালিকা
৩. সাব-জুনিয়র বালক ও বালিকা।
১. পুরুষ বলতে যাদের ওজন ৮০ কেজি বা তার নিচে তাদেরকে বোঝায়। জুনিয়র বালক বলতে যাদের ওজন ৬৫ কেজি বা তার নিচে এবং বয়স সর্বোচ্চ ২০ বছর এদের মাঠের মাপ দৈর্ঘ্য-
২. মহিলা বলতে যাদের ওজন ৭০ কেজি বা তার নিচে তাদেরকে বোঝায়। জুনিয়র বালিকা বলতে যাদের ওজন ৬০ কেজি বা তার নিচে এবং বয়স সর্বোচ্চ ২০ বছর। মাঠের দৈর্ঘ্য হবে ১২ মি: ও প্রস্থ ৮মি: (নবিসহ)। কাবাডি মাঠ (সাব জুনিয়র বালক-বালিকা) ৩. সাব-জুনিয়র বালক-বালিকা উভয়ের বয়স সর্বোচ্চ ১৬ বছর এবং ওজন ৫০ কেজি বা তার নিচে। এদের জন্য মাঠের মাপ হবে দৈর্ঘ্য ১১ মি: × প্রস্থ ৮ মি: (লবিসহ)।
সিটিং ব্লক
স্ট্রাগলের পূর্বে পুরুষ ও জুনিয়র বালকদের উভয় দিকের লবি বাদে দৈর্ঘ্য ১৩ মি: × প্রস্থ ৮ মি মহিলা ও জুনিয়র বালিকাদের দৈর্ঘ্য ১২ মি: × প্রস্থ ৬ মি: এবং সাব-জুনিয়র বালক-বালিকাদের দৈর্ঘ্য ১১ মিটার × প্রস্থ ৬ মিটার।
সিটিং ব্লক : মরা খেলোয়াড়দের বসার জন্য যে জায়গা সংরক্ষিত রাখা হয় তাকে সিটিং ব্লক বলে। কাবাড়ি কোর্টের প্রান্তরেখা থেকে ২ মি: দূরে পুরুষদের জন্য ১ × ৮ মিটার ও মহিলা ও জুনিয়র বালিকাদের জন্য ১ × ৬ মিটার দুটি ঘর থাকবে। তাকে সিটিং ব্লক বলে।
লবি : খেলার মাঠের উভয় দিকে ১ মি: চওড়া যে জায়গা আছে তাকে লবি বলে। স্ট্রাগল হলে লবি খেলার মধ্যে চলে আসে।
মধ্য রেখা : যে রেখা কোর্টকে সমান দু'ভাগে ভাগ করেছে তাকে মধ্যরেখা বলে ।
কোর্ট : প্রত্যেক অর্থের খেলার মাঠ যা মধ্যরেখা দ্বারা বিভক্ত তাকে কোর্ট বলে।
বক লাইন : মধ্যরেখার সমান্তরালে কোর্টের দিকে যে দাগ দেওয়া হয় তাকে বক লাইন বলে। যার দূরত্ব পুরুষ ও জুনিয়র বালকদের ৩.৭৫ মিটার, মহিলা এবং জুনিয়র বালিকাদের ৩ মিটার এবং সাব-জুনিয়র বালক- বালিকাদের ৩ মিটার ।
বোনাস লাইন : এন্ড লাইনের সমান্তরালে বক লাইনের দিকে ১ মিটার দূরে যে রেখা টানা হয় তাকে বোনাস লাইন বলে।
দম : এক নিঃশ্বাসে এক নাগাড়ে অনবরত সুস্পষ্টভাবে কাবাডি কাবাডি উচ্চারণ করাকে দম বলে ।
রেইডার : দম নিয়ে যে খেলোয়াড় বিপক্ষ কোর্টে হানা দেয় তাকে রেইডার বলে। বিপক্ষের কোর্ট স্পর্শ করার পূর্বেই দম ধরতে হয়।
এন্টি রেইডার : যে কোর্টে দম চলছে সেই কোর্টের সমস্ত খেলোয়াড়কে এন্টি রেইডার বলে। দম হারানো : রেইডার যদি স্পষ্টভাবে এবং অনবরত কাবাডি না বলে বা দম ছেড়েছে বুঝা যায় তাহলে দম হারানো হয়েছে বলে ধরা হবে।
এন্টিকে মারা : রেইডার যদি কোনো নিয়ম ভঙ্গ না করে এন্টির শরীরের যে কোনো অংশ স্পর্শ করে অথবা এন্টি রেইডারের শরীরের যে কোনো অংশ ধরা সত্ত্বেও দমসহ নিজ কোর্টে ফিরে আসে তাহলে এন্টি মারা হয়েছে বলে ধরা হবে।
রেইডারকে ধরা : কোনো নিয়ম ভঙ্গ না করে কোনো রেইডার যদি দম থাকা পর্যন্ত বা আম্পায়ারের বাঁশি না দেওয়া পর্যন্ত ধরে রাখে তাহলে রেইডারকে ধরা হয়েছে বলে গণ্য হবে। স্পর্শ : রেইডার যদি এন্টির শরীর বা শরীরের পরিধেয় পোশাক স্পর্শ করে তাহলে টাচ বা স্পর্শ হয়েছে বলে ধরা
হবে।
স্ট্রাগল : যখন কোনো এন্টি বা এন্টিস রেইডারের সংস্পর্শে আসে তখন তাকে স্ট্রাগল বলে। স্ট্রাগল হলে লবি খেলার মধ্যে চলে আসে।
খেলার নিয়মাবলি
১। টসে যে দলের ক্যাপ্টেন জয়লাভ করবে সে তার পছন্দমতো রেইড/কোর্ট নেবে। পরাজিত দলের ক্যাপ্টেন
অবশিষ্ট পছন্দ গ্রহণ করবে। দ্বিতীয়ার্ধে কোর্ট বদল হবে। খেলার শুরুর সময় যে দল দম দিয়েছিল দ্বিতীয়ার্ধে অপর দল দম দিয়ে খেলা শুরু করবে।
২। খেলোয়াড়ের শরীরের যে কোনো অংশ বাউন্ডারির বাইরের ভূমি স্পর্শ করলে সে মরা হবে। স্ট্রাগল হলে বাইরের ভূমি স্পর্শ করলে ঐ খেলোয়াড় মরা হবে না যদি তার শরীরের কোনো অংশ বাউন্ডারির ভিতরের ভূমির সাথে সংস্পর্শ থাকে।
৩। (ক) খেলার সময় যদি কোনো খেলোয়াড় বাউন্ডারির বাইরে যায় তাহলে সে আউট হবে। রেফারি/আম্পায়ার তার নম্বর কল করে তৎক্ষণাৎ ঐ খেলোয়াড়কে কোর্টের বাইরে নিয়ে যাবে। এ সময় বাঁশি বাজানো চলবে না, রেইড চলতে থাকবে।
(খ) রেইড চলাকালে কোনো এন্টি বা এন্টিস বাউন্ডারি সীমার বাইরে গিয়ে বা বাইরের ভূমি স্পর্শ করে রেইডারকে ধরে তাহলে রেইডার আউট হবে না, ঐ এন্টি আউট হবে।
৪। স্ট্রাগল শুরু হলে লবি খেলার মাঠ হিসেবে গণ্য হবে। স্ট্রাগলের সময় বা স্ট্রাগলের পরে যে সমস্ত খেলোয়াড় স্ট্রাগলে জড়িত ছিল তারা লবি ব্যবহার করে নিজ কোর্টে ফিরতে পারবেন।
৫। রেইডার অনুমোদিত শব্দ কাবাডি উচ্চারণ করে দম নেবে। যদি রেইডার ঠিকমতো কাবাডি উচ্চারণ না করে তাহলে রেফারি/আম্পায়ার কলব্যাক করবে এবং বিপক্ষদল একটি টেকনিক্যাল পয়েন্ট পাবে।
৬। রেইডার বিপক্ষের কোর্ট স্পর্শ করার পূর্বেই দম ধরতে হবে। যদি সে দম দেরিতে বা কোর্ট স্পর্শ করে ধরে তাহলে রেফারি/আম্পায়ার তাকে ব্যাক করাবে এবং বিপক্ষ দলকে একটি টেকনিক্যাল পয়েন্ট ও দম দেওয়ার সুযোগ দেবে।
৭। দম দেওয়ার সুযোগ (Turn) না থাকা সত্ত্বেও যদি রেইডার দম দেওয়ার জন্য বিপক্ষের কোর্টে প্রবেশ করে তাহলে তাকে রেফারি/আম্পায়ার ব্যাক করাবে ও বিপক্ষ দলকে একটি টেকনিক্যাল পয়েন্ট দেবে। প্রতিযোগিতার নিয়মাবলি
১। দল : প্রত্যেক দল কমপক্ষে ১০ জন, সর্বাধিক ১২ জন খেলোয়াড় নিয়ে গঠিত হবে। ৭ জন খেলোয়াড় মাঠে একসাথে খেলবে বাকি খেলোয়াড় বদলি হিসেবে থাকবে।
২। খেলার সময় : পুরুষ এবং জুনিয়র বালকদের জন্য খেলার সময় হবে প্রত্যেক অর্ধে ২০ মিনিট করে, মাঝে বিরতি ৫ মিনিট। মহিলা বা জুনিয়র বালিকা ও সাব-জুনিয়র বালক ও বালিকা তাদের খেলার সময় হবে প্রতি অর্থে ১৫ মিনিট করে। মাঝে বিরতি ৫ মিনিট। বিরতির পর কোর্ট বদল হবে। প্রথম অর্ধে যে কয়জন খেলোয়াড় মাঠে ছিল দ্বিতীয়ার্ধে ঐ কয়েকজন খেলোয়াড় নিয়ে মাঠে নামতে হবে।
৩। পয়েন্ট গণনার পদ্ধতি : এক পক্ষের প্রত্যেক খেলোয়াড় মরার জন্য বিপক্ষদল এক পয়েন্ট করে পাবে।
এক পক্ষের সমস্ত খেলোয়াড় মরা হলে বিপক্ষ দল সোনার জন্য অতিরিক্ত ২ পয়েন্ট পাবে ।
৪। টাইম আউট : ক) একেক দল প্রত্যেক অর্ধে দুইবার টাইম আউট নিতে পারবে। যার স্থিতিকাল হবে ৩০ সেকেন্ড। দলনেতা, প্রশিক্ষক বা দলের একজন খেলোয়াড়ও টাইম আউট রেফারির অনুমতি সাপেক্ষে নিতে পারবে। টাইম আউটের সময় খেলার সময়ের সাথে যোগ হবে।
খ) টাইম আউটের সময় খেলোয়াড়গণ কোর্টের বাইরে যেতে পারবে না বা কোর্ট ত্যাগ করতে পারবে না। যদি
এ নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে বিপক্ষ দল একটি টেকনিক্যাল পয়েন্ট পাবে।
গ) অফিসিয়াল টাইম আউট খেলোয়াড় আহত হলে, মাঠে পুনরায় দাগ দেওয়ার জন্য বা বহিরাগত দ্বারা খেলা ব্যাহত হলে অথবা এই জাতীয় কোনো ঘটনার জন্য কেবল রেফারি/আম্পায়ার টাইম আউট দেবেন। এই টাইম আউটের সময়ও মূল সময়ের সাথে যোগ হবে।
৫। বদলি
ক) অতিরিক্ত ৫ জন খেলোয়াড়ই রেফারির অনুমতি নিয়ে টাইম আউট অথবা বিরতির সময় বদল করা যাবে।
খ) বদলিকৃত খেলোয়াড় পুনরায় মাঠে নামতে পারবে। কাবাডি খেলার কলাকৌশল কাবাডি খেলায় দুই ধরনের কৌশল আছে-
(১) রক্ষণাত্মক কৌশল (২) আক্রমণাত্মক কৌশল
১. রক্ষণাত্মক কৌশল : এন্টি রেইডার বা যে কোর্টে দম চলছে ঐ কোর্টের সমস্ত খেলোয়াড় যে কৌশল অবলম্বন করে তাকে রক্ষণাত্মক কৌশল বলে। যেমন-
(ক) গোড়ালি ধরা (খ) হাঁটু ধরা (গ) কোমর ধরা (ঘ) হাতের কব্জি ধরা (3) চেইন দিয়ে ধরা ইত্যাদি।
গোড়ালি ধরা
আরও দেখুন...